‘আমি শয়তানও না, ফেরেশতাও না’: ইনু
ডেস্ক রিপোর্ট:
পনেরো বছর ধরে জনপ্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় যে ভুলত্রুটি হয়েছে তার জন্য সবার কাছে ক্ষমা চেয়েছেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি ও সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু।
তিনি বলেছেন, ‘আমি শয়তানও না, ফেরেশতাও না। ফেরেশতা ভুল করে না, শয়তান ভুল করে না। আমি মানুষ, এ দীর্ঘ ১৫ বছর আপনাদের সঙ্গে চলতে ফিরতে, চলার পথে হয়তো দু-একটা ভুলত্রুটি হতে পারে। সে জন্য আমি সবার কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।’
বৃহস্পতিবার (২১ ডিসেম্বর) বিকেলে কুষ্টিয়ার মিরপুর বাজার ঈগল চত্বরে জাসদ আয়োজিত নির্বাচনী পথসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ইনু বলেন, ‘আমি মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে নৌকা প্রতীক নিয়ে এই ভোটে অংশগ্রহণ করছি। আজকের এই পথসভায় আমি আপনাদের সামনে দাঁড়িয়ে প্রথমে আমি আমার কৈফিয়ত দিতে চাই। ২০০৮ সাল থেকে আজ অবধি প্রায় ১৫ বছর আপনাদের প্রতিনিধি হিসেবে আমি দায়িত্ব পালন করে আসছি। কোনো ভুল হলে হাত জোড় করে ক্ষমা চাচ্ছি।’
হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘আপনাদের সব দাবি আমি পূরণ করতে নাও পারি। আপনাদের সব স্বপ্ন আমি পূরণ করতে হয়তো পারিনি। তাই প্রথমে আমি একজন এমপি হিসেবে, আমি যেটুকু ভুলত্রুটি করেছি বা কোনো কারণে খারাপ ব্যবহার করেছি, তার জন্য হাত জোড় করে আমি মাফ চেয়ে নিচ্ছি। একইসঙ্গে বলবো- আমি যদি আবার দায়িত্বপ্রাপ্ত হই তাহলে যে ভুলগুলো আমার হয়েছে, সেই ভুলগুলো আমি শুধরে নেব। আমি আরও ভালো করে আপনাদের সেবা করার চেষ্টা করবো। আমি এটাও বলছি এই নির্বাচনী পথসভায় যে দীর্ঘ ১৫ বছরে আমি আপনাদের এলাকার আবদার, আপনাদের পারিবারিক আবদার, আপনাদের দাবি যেগুলো করেছেন, আমি পূরণ করার চেষ্টা করেছি।’
ইনু তার নির্বাচনী এলাকার উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের কথা তুলে ধরে বলেন, ‘রাস্তাঘাটের কথা বলুন, স্কুল-কলেজের কথা বলুন, মন্দির-শ্মশানের কথা বলুন, গোরস্থান-মসজিদের কথা বলুন, আমি আমার সাধ্যমতো সরকারি বরাদ্দ এনে করে দিয়েছি এবং আপনাদের সাক্ষী রেখে বলতে চাই এই বরাদ্দ থেকে আমি ইনু একটা টাকাও চুরি করিনি। কেউ যদি প্রমাণ করতে পারেন তাহলে রাজনীতি ছেড়ে দেব। জনগণের আমানত আমি খেয়ানত করিনি।’
জাসদ সভাপতি বলেন, ‘এই ১৫ বছরে আমার সাধ্যমতো আমি চেষ্টা করেছি। অনেকেই বলেন, উন্নয়ন নাকি হয়নি। আমি এটা নিয়ে কোনো তর্কে লিপ্ত হতে চাই না। যারা আমার তৈরি করা রাস্তার ওপরে দাঁড়িয়ে, আমার তৈরি করা স্কুল ভবনের সামনে দাঁড়িয়ে বলে যে উন্নয়ন হয়নি তাদের আমি কী আর বলব? যে রাস্তা দিয়ে আপনারা এসেছেন সেটি সেই পাকা রাস্তা। আমি কমবেশি উপকার করতে পারি হয়তো। কিন্তু কারোর ক্ষতি করিনি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি বঙ্গবন্ধুর পাশে দাঁড়িয়ে তার নির্দেশে যুদ্ধ করেছি। তারপরে একদিনও ঘুমাতে পারিনি। বাংলাদেশকে সামরিক শাসকদের কাছ থেকে উদ্ধার করার জন্য, সাম্প্রদায়িকতা থেকে উদ্ধার করার জন্য, বিদেশি চক্রান্ত থেকে বাঁচানোর জন্য আমি শেখ হাসিনার পাশে অতন্ত্র প্রহরীর মতো দাঁড়িয়ে লড়াই চালিয়ে গেছি। দিনের পর দিন জেল খেটেছি। জেল-জুলুম ছিল, অত্যাচার ছিল; কিন্তু মাথা নত করিনি। এখনও শেখ হাসিনার পাশে দাঁড়িয়ে আমি কঠিনভাবে লড়াই চালাচ্ছি, যাতে নির্বাচনটা হয়। যাতে আগুন-সন্ত্রাস থেকে দেশটা বাঁচে। যাতে জঙ্গি তাণ্ডব থেকে দেশটা বাঁচে। যাতে একটা কারচুপিমুক্ত, সন্ত্রাসমুক্ত শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হয়। আমি এখনও শেখ হাসিনার পাশে দাঁড়িয়ে বিদেশি চক্রান্ত থেকে, তাবেদার সরকার গঠনের চক্রান্ত থেকে বাংলাদেশকে রক্ষা করার জন্যে কঠিন লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি।’
মিরপুর উপজেলা জাসদের সাধারণ সম্পাদক আহমদ আলীর সভাপতিত্বে নির্বাচনী পথসভায় উপস্থিত ছিলেন মিরপুর পৌরসভার মেয়র হাজী ইনামুল হক, স্থানীয় ফুলবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা আতাহার আলী প্রমুখ।