কুমিল্লার সাবেক বিচারক সোহেল ক্ষমা পাবেন কি না, আদেশ ১২ ডিসেম্বর

ডেস্ক রিপোর্ট:

inside-post

গ্রামীণ কল্যাণের মুনাফা নিয়ে শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালের আদালত অবমাননার দায়ে হাইকোর্টে এক মাসের সাজাপ্রাপ্ত কুমিল্লার সাবেক চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (বর্তমানে আইন মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত) মো. সোহেল রানার নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনার বিষয়ে শুনানি শেষ হয়েছে। এ বিষয়ে আদেশ দেওয়ার জন্য আগামী ১২ ডিসেম্বর দিন ধার্য করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।

বুধবার (৬ ডিসেম্বর) প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন ছয় বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এই আদেশ দেন।

জ্যেষ্ঠ আইনজীবী অ্যাডভোকেট শাহ মঞ্জুরুল হক বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

আদালতে এদিন বিচারকের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক। সঙ্গে ছিলেন অ্যাডভোকেট রাফিউল ইসলাম ও ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হারুনুর রশিদ।

এর আগে মঙ্গলবার (৫ ডিসেম্বর) এ সংক্রান্ত বিষয়ে শুনানি শেষে সোহেল রানার সাজার রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের পরবর্তী শুনানির জন্য বুধবার (৬ ডিসেম্বর) দিন ধার্য করেন আদালত। সেই ধারাবাহিকতায় আজ সেটি শুনানি হয়।

গত ১২ অক্টোবর মো. সোহেল রানাকে এক মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ডাদেশ দেন হাইকোর্ট। রায়ে তাকে সাতদিনের মধ্যে ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেওয়া হয়।

ওইদিন আদালতে সোহেল রানার পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক। আবেদনকারীর পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী প্রণয় কান্তি রায়।

এর আগে গত ২১ নভেম্বর আপিল বেঞ্চ সোহেল রানাকে হাইকোর্টের দেওয়া এক মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড ও পাঁচ হাজার টাকা জরিমানার রায় ৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত স্থগিত করে আদেশ দেন।

গত ১২ অক্টোবর সন্ধ্যায় কুমিল্লার সাবেক চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. সোহেল রানার সাজার রায় ২০ নভেম্বর পর্যন্ত স্থগিত করেছিলেন চেম্বার জজ আদালত। একই সঙ্গে শুনানির জন্য আপিল বিভাগে পাঠিয়ে দেন। ওইদিন চেম্বার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম তার খাস কামরায় এ আদেশ দেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, হাইকোর্টের সাজার আদেশের পর জামিন আবেদনের পাশাপাশি চেম্বার আদালতের কাছেও একটি আবেদন নিয়ে যান বিচারক সোহেলের আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক। তখন চেম্বার আদালত তার খাস কামরায় বসেই সাজা স্থগিত করে আদেশ দেন।

একই দিন বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আদালত অবমাননার দায়ে বিচারক মো. সোহেল রানাকে এক মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন বিচারপতি মো. বদরুজ্জামান ও বিচারপতি এস এম মাসুদ হোসেন দোলনের হাইকোর্ট বেঞ্চ। কিন্তু তিন ঘণ্টা পর দুপুরে হাইকোর্টের একই বেঞ্চ তাকে জামিন দেন।

এ ঘটনায় তাৎক্ষণিক আদালত প্রাঙ্গণে কিছুটা চাঞ্চল্য তৈরি হলেও আইনের দিক থেকে এখানে কোনো ব্যত্যয় হয়নি বলে জানান আইনজীবীরা।

মামলার নথি থেকে জানা যায়, টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইনে মামুন চৌধুরী ও রিয়া আক্তার দম্পতির বিরুদ্ধে ২০১৭ সালের ২৭ মার্চ কুমিল্লার কোতোয়ালি মডেল থানায় একটি মামলা হয়। মামলার কার্যক্রমের বৈধতা নিয়ে মামুন-রিয়া দম্পতির করা এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৮ সালের ৪ নভেম্বর হাইকোর্ট রুল দেন। একই সঙ্গে মামলার কার্যক্রম চার মাসের জন্য স্থগিত করেন হাইকোর্ট।

২০১৯ সালের ৬ মার্চ রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত মামলার কার্যক্রম স্থগিত করেন হাইকোর্ট। এ স্থগিতাদেশ সত্ত্বেও কুমিল্লার তৎকালীন চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সোহেল রানা গত ১০ এপ্রিল সংশ্লিষ্ট মামলায় অভিযোগ গঠন করেন।

উচ্চ আদালতের আদেশ উপেক্ষা করে মামলার কার্যক্রম চালানো এবং অভিযোগ গঠন করায় বিচারক সোহেল রানার বিরুদ্ধে হাইকোর্টে অভিযোগ করেন আসামি মামুন চৌধুরী।

গত ১৪ আগস্ট হাইকোর্ট এক আদেশে বিচারক সোহেল রানাকে তলব করেন। উচ্চ আদালতের আদেশ অমান্য করার বিষয়ে অবস্থান ব্যাখ্যা করতে ২১ আগস্ট তাকে হাইকোর্টে হাজির হতে বলা হয়। ধার্য তারিখে তিনি হাইকোর্টে হাজির হন। পরবর্তী সময়ে জবাব দাখিল করেন। তবে জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় গত ২৮ আগস্ট সোহেল রানার প্রতি আদালত অবমাননার স্বপ্রণোদিত রুল দেন হাইকোর্ট। পাশাপাশি ৯ অক্টোবর তাকে হাইকোর্টে হাজির হতে নির্দেশ দেওয়া হয়।

আদালত অবমাননার রুলের পর গত ৩১ আগস্ট বিচারক সোহেল রানা কুমিল্লার সেই মামলার অভিযোগ গঠনের আদেশ প্রত্যাহার করেন। হাইকোর্টের ধার্য তারিখে হাজির না হয়ে তিনি সময়ের আবেদন করেন। হাইকোর্ট ১২ অক্টোবর পরবর্তী তারিখ ঠিক করেন।

সে অনুযায়ী সোহেল রানা ধার্য তারিখে হাইকোর্টে হাজির হন এবং আদালত অবমাননার বিষয়ে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেন। কিন্তু আদালত ক্ষমা প্রার্থনা গ্রহণ না করে তাকে বিনাশ্রম একমাসের কারাদণ্ড এবং জরিমানার আদেশ দেন।

আরো দেখুন