গরমে সুস্থ রাখতে শিশুর যত্ন

গরমে সুস্থ রাখতে শিশুর যত্ন

inside-post

ঋতু বৈচিত্র্যের দেশ বাংলাদেশ। চলছে গরমের মৌসুম। তাপমাত্রার এই ব্যাপক তারতম্যের স্বাস্থ্যঝুঁকির প্রথম শিকার হয় শিশুরা। এই চৈত্রের গরমে শিশুদের বাড়তি যত্ন নেওয়া অত্যাবশ্যকীয়। গরম সবার জন্যই কষ্টকর, তবে শিশুরা খুব বেশি স্পর্শকাতর বলে অনেকে গরম আবহাওয়ায় সহজে খাপ খাওয়াতে পারে না। তাই অন্যান্য সময়ের তুলনায় এ সময় শিশুদের জন্য বেশি কষ্টকর ও অসহনীয়। তাই গরমে শিশুদের সুস্থ রাখতে প্রয়োজন বাড়তি যত্ন।

শিশুর খাদ্য :
গরমে শিশুদের খাদ্য তালিকায় হালকা, পুষ্টিকর ও সহজপাচ্য খাবার রাখতে হবে। সেটা হতে হবে অবশ্যই নরম খাবার। তবে খেয়াল রাখতে হবে গরমে শিশুদের খাবার যাতে বাইরের না হয়। ঘরেই সহজপাচ্য খাবার বানিয়ে শিশুকে খাওয়ান। গরমের দিন মাছ-মাংস একটু কম করেই খাওয়ানো উচিত।

গরমে শিশুকে যথেষ্ট পরিমাণে ঠাণ্ডা পানি পান করান। কেননা এ সময় শিশুরা খুবই ঘেমে যায়। এতে শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণে পানি ঝরে যায়। তবে খেয়াল রাখবেন পানি যেন ফ্রিজের না হয়। এছাড়া গরমকালে বিভিন্ন রসালো ফল পাওয়া যায়। শিশুদের অবশ্যই গরমে এসব ফল খাওয়াবেন। ফলের জুসও খাওয়াতে পারেন।
শিশুর প্রসাধনী :
গরমের সময়টাও শিশুদের জন্য খুবই ঝুঁকির। কারণ আবহাওয়ার পরিবর্তন হয়। গরমে সূর্যের তাপ বেশি। তাই শিশুর ত্বক নরম ও কোমল রাখতে বাড়তি যত্নের দরকার। গরমে শিশুর স্বস্তির জন্য কিছু প্রসাধনীর প্রয়োজন পড়ে। এক্ষেত্রে অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে- যেন শিশুর প্রসাধনী মানসম্পন্ন হয়।

শিশুর স্বাস্থ্য :
শিশুর স্বাস্থ্য বিষয়ে বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে। ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি ব্যবহার করতে হবে। শিশুর সুস্থতার জন্য ঘর পরিষ্কার রাখতে হবে। কোন রকম শারীরিক সমস্যা দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে হবে।

শিশুদের পোশাক :
গরমে আপনার শিশুর পোশাকের দিকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে। গরমের দিনগুলোতে শিশুকে সুতির নরম ও পাতলা পোশাক পরান। হাতা কাটা পোশাক পরানো প্রয়োজন। ডিসপোজেবল ন্যাপির পরিবর্তে সুতির পাতলা কাপড়ের ন্যাপি পরানো ভালো। কেননা ডিসপোজেবল ন্যাপিগুলো ঘাম ও তাপ শোষণ করতে পারে না তাই র‌্যাশ, ঘামাচি প্রভৃতি সমস্যা দেখা দিতে পারে।

নিয়মিত গোসল :
গরমে শিশুদের খুব দ্রুত র‌্যাশ ও ঘামাচি উঠে। তাই গরমের দিনে শিশুকে নিয়মিত গোসল করাতে হবে। গোসলের সময় ভাঁজযুক্ত জায়গা যত্ন সহকারে পরিষ্কার করতে হবে। গোসলের পানিতে ডেটলও দিতে পারেন।

শিশুর চুলের যত্ন :
এই গরমে আদরের ছোট্ট সোনামণির চুলের দিকেও খেয়াল রাখতে হবে। গরমে শিশুর বেশিরভাগ চুলের গোড়া ঘেমে যায়। এতে মাথায় খুশকি ও ঘামাচি বের হয়। তাই গরমের শুরুতেই শিশুর চুল ছোট রাখতে হবে। ন্যাড়া করে দিলে আরও ভালো হয়।

শিশুর আবাসস্থল :
গরমে শিশুকে ঠাণ্ডা রাখার জন্য ঘরে যেন প্রচুর আলো-বাতাস ঢুকতে পারে সেই ব্যবস্থা করতে হবে। দম বন্ধ করা ঘরে রাখলে শিশু অসুস্থ হয়ে যাবে। তাই বলে ঠাণ্ডার জন্য এসি ব্যবহার করা যাবে না। মাঝে মাঝে আপনার শিশুকে বারান্দায় নিয়ে যাবেন।

জেনে নিন সোনামণিকে সুস্থ রাখতে আরও কিছু প্রয়োজনীয় পরামর্শ :

• শিশুকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখুন
• নিয়মিত সাবান দিয়ে গোসল করান
• গোসলের পর শিশুর শরীর ভালো করে মুছে পাউডার দিন
• গরমে শিশুর খাবার নির্বাচনে সচেতন হতে হবে। শিশুকে পুষ্টিকর এবং শরীরকে ঠাণ্ডা রাখে এমন খাবার দিতে হবে
• অন্যান্য খাবারের সঙ্গে গরমে শিশুকে প্রচুর পরিমাণে পানি ও ফলের জুস খাওয়ান
• গরমে শিশুর দুর্বলতা কাটাতে মাঝে মাঝে খাওয়ার স্যালাইন খেতে দিন
• সুতি পাতলা কাপড়ের নরম পোশাক পরান
• বাইরের গরমে শিশুকে কম বের করুন
• তাকে ধুলাবালি থেকে দূরে রাখুন
• শিশু ঘেমে গেলে ঘাম মুছে দিতে হবে
• শরীরে ঘাম শুকিয়ে গেলে শিশুর জ্বর হতে পারে
• অনেক সময় এমন জ্বর অল্পদিনে এমনিতেই সেরে যায়
• কিন্তু বেশি দিন গড়ালে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ মতো ব্যবস্থা নিন
• গরমের সময় শিশুর চুল ছোট করে ছেঁটে রাখুন
• বড় চুল শুকাতে সময় লাগে, আর ঘামও বেশি হয়
• শিশুর যেন পর্যাপ্ত ঘুম হয় সেদিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে
• ঘরে ফ্যান বা এসির তাপমাত্রা শিশু যতটায় স্বত্তি বোধ করে অতটুকুই রাখুন।

আরো দেখুন