অস্থির খেজুরের বাজার, রোজায় বেশি লাভ করতে আমদানি কমিয়েছেন ব্যবসায়ীরা!
ডেস্ক রিপোর্ট:
আসন্ন রমজানে সংকট সৃষ্টির মাধ্যমে দাম বাড়ানোর সুযোগ নিতে খেজুর আমদানি কমিয়ে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। সাড়ে তিন মাসে বাংলাদেশে মাত্র ১০ হাজার ৮০ মেট্রিক টন খেজুর আমদানি হয়েছে। যা গত বছর এ সময়ের তুলনায় অর্ধেকেরও কম। কূটকৌশলের সত্যতা মিলেছে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের পরিসংখ্যানে। তবে ব্যবসায়ীদের দাবি, গণহারের পরিবর্তে মানভেদে ১ থেকে ৪ ডলারে শুল্কায়ন পদ্ধতি চালু হওয়ায় খেজুর আমদানি কম হচ্ছে।
রমজান শুরুর এখনও দেড় মাস বাকি থাকলেও অস্থির হয়ে উঠেছে দেশের খেজুরের বাজার। গত কয়েক সপ্তাহে প্রকারভেদে সব ধরনের খেজুরের দাম বেড়েছে কেজিতে ১৪০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত। বিশেষ করে, প্রিমিয়াম কোয়ালিটির মাশরুক খেজুর ৫ কেজির প্যাকেট ৭ হাজার ২০০ টাকা এবং মেজদুল ৬ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অথচ এসব খেজুরের দাম ছিল ৪ হাজার টাকা থেকে ৫ হাজার টাকা। একেবারে সাধারণ মানের ১ হাজার ৮০০ টাকার সুগাই ২ হাজার ৫০০ টাকা এবং ২ হাজার ৫০০ টাকার মাব্রুম খেজুর বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ২০০ টাকায়।
এছাড়া সাধারণ মানের ৪ হাজার ৮০০ টাকার মেজদুল বিক্রি হচ্ছে ৬ হাজার ২০০ টাকায়, ২ হাজার ৭০০ টাকার মরিয়ম ৪ হাজার ৩০০ টাকায় এবং ৩ হাজার ২০০ টাকার আজোয়া ৪ হাজার ২০০ টাকায়।
বাংলাদেশ ফ্রেশ ফ্রুটস ইম্পোটার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. তৌহিদুল আলম বলেন,
শুল্ক অস্বাভাবিকভাবে হারে বেড়ে যাওয়ায় খেজুরের দাম অনেক বেশি বেড়ে গেছে। কাজেই আগামীতে বাজারে যে খেজুর সংকট দেখা দেবে, তা শতভাগ নিশ্চিত করে বলা যায়।
নানা কূটকৌশলে খেজুর আমদানি কমিয়ে দেয়ার সত্যতা মিলেছে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের আমদানি পরিসংখ্যানে। চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে রমজান সামনে রেখে গত বছরের অক্টোবর থেকে চলতি বছরের ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত ১০ হাজার ৮০ মেট্রিক টন খেজুর আমদানি হয়েছে। আমদানি করা খেজুরের বাজার মূল্য ২২৭ কোটি টাকা হিসাবে সরকার রাজস্ব পেয়েছে ১০৩ কোটি টাকা। কিন্তু গত বছরের এ সময়ে ২৪ হাজার ৭৬০ মেট্রিক টন খেজুর আমদানি হয়েছিল। যদিও শুল্কহার তেমন না থাকায় আমদানি করা ২৬৬ কোটি টাকার খেজুরের বিপরীতে সরকার রাজস্ব পেয়েছিল মাত্র ১৪ লাখ টাকা।
এবিষয়ে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের উপ কমিশনার ব্যারিস্টার মো. বদরুজ্জামান মুন্সি বলেন, তিনটি ক্যাটাগরিতে শুল্কায়নযোগ্য মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। সেগুলোর ওপর যথাযথ শুল্ককর আদায় প্রক্রিয়া শেষ করে খালাস দেয়া হচ্ছে।
শুল্ক বেশি থাকার অভিযোগ করে চট্টগ্রামের ফলমন্ডির মেসার্স তুহিন এন্টারপ্রাইজের মালিক মোহাম্মদ মাসুদ বলেন, কাস্টম যদি ট্যাক্স কমিয়ে দেয়, তাহলে আমদানিকারকরা খেজুর আমদানি করতে পারবেন এবং সাধারণ মানুষও খেজুর কিনে খেতে পারবে।
গত বছরের মার্চ মাস পর্যন্ত ৫ কেজির প্রতি প্যাকেট খেজুরের শুল্কায়ন হার ছিল মাত্র ৫০ সেন্ট থেকে ১ মার্কিন ডলার। কিন্তু একেবারে নামমাত্র শুল্ক দিয়ে আমদানি করা খেজুর বিভিন্ন নামে বিক্রি হয়েছে চড়া দামে। গত বছর শুধুমাত্র রমজান মাসেই খেজুরের দামের কারসাজিতে অন্তত ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেন ব্যবসায়ীরা। এরই প্রেক্ষিতে গত ১ এপ্রিল থেকে খেজুরের শুল্কায়ন সাধারণ কোয়ালিটি ৫০ সেন্ট থাকলেও প্রিমিয়াম কোয়ালিটির শুল্ক নির্ধারণ করা হয় ৪ মার্কিন ডলার।
এতেই আমদানি খরচ বেড়ে গেছে বলে দাবি পাইকারি ব্যবসায়ীদের। চট্টগ্রামের ফলমন্ডির পাইকারী ব্যবসায়ী নূর মোহাম্মদ বলেন, এখন যে পরিমাণ ট্যাক্স দিতে হচ্ছে। এই হার বজায় থাকলে বাংলাদেশের ৭০ থেকে ৮০ ভাগ মানুষ খেজুর খেতে পারবেন না।
প্রসঙ্গত, দেশে বছরে ৭০ থেকে ৮০ হাজার মেট্রিক টন খেজুরের চাহিদা রয়েছে। সৌদি আরব, ওমান, ইরাকসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে এই খেজুর আমদানি করা হয়। আর রমজান মাসেই অন্তত ২৫ হাজার মেট্রিক টন খেজুরের প্রয়োজন।
গত বছরও খেজুরের শুল্কায়ন হয়েছে গণহারে। অর্থাৎ, এক কেজি খেজুরের শুল্ক এক মার্কিন ডলার। কিন্তু এখন শুল্কায়ন হচ্ছে খেজুরের প্রকারভেদে। তাতে শুল্ক গিয়ে ঠেকেছে ৪ ডলারে। এর জন্য খেজুরের দাম অন্তত ৪ গুণ বেড়ে তা সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে বলে দাবি করছেন ব্যবসায়ী ও আমদানিকারকরা।