ব্রাহ্মণপাড়ায় ক্রেতা বিক্রেতা সরগরম ধানের চারার হাট
ব্রাহ্মণপাড়ায় ক্রেতা বিক্রেতা সরগরম ধানের চারার হাট
ব্রাহ্মণপাড়া (কুমিল্লা) প্রতিনিধি
কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ায় আমন চারার হাটে চারা ক্রেতা বিক্রেতা সরগরম হয়ে উঠেছে এবং বেচাকেনার ধুম পড়েছে। উপজেলার কুমিল্লা-মিরপুর সড়কের চান্দলা সাহেবাবাদ ও বড়ধুশিয়ায় সপ্তাহে দুদিন বসে এ চারার হাট। এ ছাড়াও উপজেলার সিদলাই, মালাপাড়া ও দুলালপুর হাটেও চলে চারা বেচাকেনা।
ব্রাহ্মণপাড়া গোমতী ও সালদানদী ভাঙা পড়ে পুরো উপজেলা প্লাবিত হয়ে যায়। যার ফলে আগাম আমনের বীজতলা সম্পুর্ণ নষ্ট হয়ে যায়। ব্যপক ক্ষতি হয়েছে উপজেলা প্রান্তিক কৃষকদের। পরবর্তী সময়ে প্রান্তিক কৃষক কয়েকদিন হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে আমন ধানের চারা উৎপন্ন করে নিজের চাহিদা মিটিয়ে চারা বিক্রির করছে উপজেলার বাজার গুলোতে।
বন্যার পর কৃষকেরা আমনের বীজতলা তৈরির সময় জমিতে পানি থাকায় আমনের বীজতলা তৈরিতে সমস্যা দেখা দিয়েছিল। কিছু কৃষক উচু জমিতে এ বার বীজতলা তৈরি করে। এবং বন্যায় সমস্ত বীজতলা নষ্ট হয়ে গেলে এখন অন্য বছরের তুলনায় এবার রোপা আমন ধানের চারা বেচাকেনা তুলনামূলক বেশি হচ্ছে বলে জানান আমন চারা বিক্রেতারা।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এ বছর রোপা আমন মৌসুমে বীজতলা তৈরির সময় আবহাওয়া অনুকূলে ছিল না। ফলে এ বছর যথাসময়ে বীজতলা তৈরি করতে পারেনি অনেক কৃষক। এর পর শুরু হয় ব্রাহ্মণপাড়ায় আকস্মিক বন্যা যার ফলে বীজতলা পানিতে তলিয়ে গিয়ে সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যায়। চলতি মৌসুমে আমনের বীজ তলার লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৬৬ হেক্টর, অর্জিত হয়েছিল ২০৫ হেক্টর।কিন্তু ভয়াবহ বন্যার কারণে অর্জিত বীজতলা নষ্ট হয়ে যায় বলে জানায় কৃষি বিভাগ।এ উপজেলায় ৫ হাজার ৪২৯ হেক্টর জমিতে রোপা আমন ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
চান্দলা বাজারে ধানের চারা বিক্রয় করতে আসা উপজেলার সিদলাই গ্রামের কৃষক আবুল হোসেন জানান, বন্যার পরে আমি উপজেলা কৃষি অফিসারগণের পরামর্শে বিএডিসি অফিস থেকে ৪৫ কেজি ধান সংগ্রহ করে ১৫ শতক জমিতে চারা ফলাই। এতে যে ধানের চারা হয়েছে তা দিয়ে আমার ১২০ শতক জমিতে চারা রোপণ করে বাকি চারা আমি ৩ হাজার টাকা বিক্রয় করেছি এবং আমি আরও ২ হাজার টাকার চারা বিক্রি করতে পারব।
সাহেবাবাদ বাজারে চারা বিক্রেতা কৃষক কফিন মিয়া বলেন, আমি প্রতি আমন মৌসুমে চারা বিক্রি করে থাকি। বন্যার পর আমি ১২ শতক জমিতে বীজতলা তৈরি করি। নিজের জমি রোপণ শেষে অবশিষ্ট চারাগুলো বিক্রি করি। এ বছর ধানের চারার চাহিদা একটু বেশি।
বাজারে আসা ক্রেতা উপজেলার নাইঘর গ্রামের কৃষক আলী আক্কাস জানান, আমি সাহেবাবাদ বাজারে এসেছি আমন ধানের চারা কিনতে। এই বাজারে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে কৃষকরা ধানের চারা ক্রয় বিক্রয় করতে আসে। আমিও প্রতিবছর এই বাজার থেকে চাহিদা ও পছন্দমতো ধানের চারা ক্রয় করে আমার জমি আবাদ করে আসছি।তবে বন্যার পর চারার দাম তুলনামূলক বেশি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মাসুদ রানা বলেন, এ বছর আমনের বীজতলা তৈরির সময় আবহাওয়া অনুকূলে ছিল না। কিন্তু বন্যার কারণে আমাদের ব্রাহ্মণপাড়া সমস্ত বীজতলা নষ্ট হয়ে যায়। বন্যার পর এখনো বীজ তলার লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। বীজতলার ঘাটতি পূরণেও আমরা আগাম পরিকল্পনা নিয়ে রেখেছি। তবে আমন রোপণে চারার ঘাটতি হবে না। আমন চাষ উপযোগী আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এ উপজেলায় আমনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে বলেও আশা করছি।