সাড়ে ৭ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে চিঠি
ডেস্ক রিপোর্ট:
জাতীয় সংসদ নির্বাচন কেন্দ্র করে গত ২৮ অক্টোবর থেকে দুই মাসের বেশি সময় হরতাল-অবরোধ কর্মসূচির মধ্য দিয়ে গেছে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো। হরতাল-অবরোধেও গণপরিবহন চলাচল স্বাভাবিক রাখতে সচেষ্ট ছিল মালিক সমিতি। পরিবহন চলায় দুর্বৃত্তরা এসময় কয়েকশ গাড়িতে আগুন ও ভাঙচুর করে। সেসব ঘটনার ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করে সাহায্যার্থে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে চিঠি পাঠিয়েছে মালিক সমিতি।
পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের দাবি, গত ২৮ অক্টোবর থেকে ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত হরতাল-অবরোধে ঢাকাসহ সারাদেশে পাঁচ শতাধিক বাস-ট্রাকে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করেছে দুর্বৃত্তরা। এতে আনুমানিক ক্ষতি হয়েছে ৪৭ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। এই সময়ে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জেলায় গণপরিবহন ও ট্রাক-কাভার্ডভ্যান কম চলায় পরিবহন খাতে ক্ষতি হয়েছে ১৭ হাজার কোটি টাকার বেশি।
গত ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত গাড়ির ক্ষতিপূরণ পাওয়ার জন্য বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি কার্যালয়ে আবেদন করেছেন ২১৫টি (পোড়া-১৫৩টি ও ভাঙচুর-৬২টি) গাড়ির মালিক। তাদের দাবি অনুযায়ী, এ গাড়িগুলোর আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ১৬ কোটি ৪২ লাখ ৯৯ হাজার ৯৩৫ টাকা। যদিও মালিক সমিতির পক্ষ থেকে যাচাই-বাছাই করে ৭ কোটি ৪৪ লাখ ১৯ হাজার ৫০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। পরে এই পরিমাণ টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে।
হরতাল-অবরোধ চলাকালে প্রতিদিনই আগুনে পুড়ে যাওয়া বাসের কাগজপত্র নিয়ে সমিতির কার্যালয়ে আসেন মালিকরা। তখন তাদের কাগজপত্র ভালোভাবে যাচাই-বাছাই করা হয়। কোনো কাগজ কম থাকলে তাদের ক্ষতিপূরণের আবেদন গ্রহণ করা হয়নি।- ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির দপ্তর সম্পাদক সামদানী খন্দকার।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি সূত্র জানায়, গত ২৮ অক্টোবর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে ঢাকায় মহাসমাবেশ করে বিএনপি ও জামায়াত। ওইদিন এ সমাবেশ কেন্দ্র করে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের তুমুল সংঘর্ষ হয়। এরপর থেকে গত ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত টানা হরতাল-অবরোধসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করে বিএনপি-জামায়াত। এসব কর্মসূচি চলাকালে ঢাকায় ১২৮টি বাসে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। যার আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ২২ কোটি ২১ লাখ টাকা। একই সময়ে ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জেলায় ৬২টি বাসে আগুন দেওয়া হয়েছে। যার ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১৭ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে ১৯০ বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ৩৯ কোটি ২১ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
এছাড়া ঢাকার বাইরে ৩৯টি ট্রাক ও কাভার্ডভ্যানে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৫ কোটি ২৫ লাখ টাকা। সব মিলে ২২৯টি বাসে আগুন ও ভাঙচুরের ঘটনায় ক্ষতি ৪৪ কোটি ৪৬ লাখ টাকা।
কীসের ভিত্তিতে এই পরিমাণ ক্ষতিপূরণ নির্ধারণ করা হয়েছে তা জানতে চাইলে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির এক কর্মকর্তা জানান, ঢাকা ও ঢাকার বাইরের বিভিন্ন জেলায় আগুনে পুড়ে যাওয়া এবং ভাঙচুর করা যানবাহনের ক্ষতির পরিমাণ আলাদাভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকার বাইরের বাসগুলো যেহেতু বড়, সেজন্য সেগুলো আগুনে পুড়লে গড়ে ৩০ লাখ টাকা ক্ষতি ধরা হয়েছে। আর ঢাকা শহরে ছোট বাস চলাচল করায় এগুলো পুড়লে ২০ লাখ টাকা ক্ষতি ধরা হয়। এছাড়া ট্রাক বা কাভার্ডভ্যান ভাঙচুর করলে ক্ষতি ধরা হয় পাঁচ লাখ টাকা। আর বাস ভাঙা হলে দুই লাখ টাকা ক্ষতি ধরে এ তালিকা তৈরি করা হয়েছে। তবে চূড়ান্ত তালিকা তৈরি করার সময় বাসের রুট পারমিট, ফিটনেসসহ যাবতীয় কাগজপত্র দেখে একেকটার ক্ষতিপূরণ সর্বনিম্নহারে একেকভাবে ধরা হয়েছে।
সেবা দিতে গিয়ে গণপরিবহনকে টার্গেট করেছে বিএনপি-জামায়াত। তারা রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে যাত্রীবাহী বাসে আগুন দিচ্ছে। তাদের দেওয়া আগুন থেকে যাত্রী, পরিবহন শ্রমিক কেউ রেহাই পায়নি। এখন যে ক্ষতিপূরণের তালিকা প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে পাঠানো হয়েছে, আশাকরি প্রধানমন্ত্রী পরিবহন মালিকদের সহায়তা করবেন।- এনায়েত উল্যাহ
ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির দপ্তর সম্পাদক সামদানী খন্দকার বলেন, ‘হরতাল-অবরোধ চলাকালে প্রতিদিনই আগুনে পুড়ে যাওয়া বাসের কাগজপত্র নিয়ে সমিতির কার্যালয়ে আসেন মালিকরা। তখন তাদের কাগজপত্র ভালোভাবে যাচাই-বাছাই করা হয়। কোনো কাগজ কম থাকলে তাদের ক্ষতিপূরণের আবেদন গ্রহণ করা হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘২০১৮ সালে নির্বাচনের সময়ও এভাবে গণহারে গণপরিবহনে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করা হয়েছিল। তখন নির্বাচনের পর ক্ষতিগ্রস্ত বাস মালিকদের একটি তালিকা প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে পাঠানো হয়। ক্ষতিপূরণও পেয়েছিলেন মালিকরা। এবারও গত ১ জানুয়ারি বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ স্বাক্ষরিত একটি ক্ষতিপূরণের তালিকা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দপ্তরে পাঠানো হয়েছে।’
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াতের হরতাল-অবরোধে যাত্রীরা ঘরে বসে থাকেননি। জীবিকার তাগিদে সবাই বের হয়েছেন। তাদের সেবা দিতেই ঢাকাসহ সারাদেশে সড়কে যাত্রী পরিবহন স্বাভাবিক রেখেছে মালিক সমিতি। কিন্তু এ সেবা দিতে গিয়ে গণপরিবহনকে টার্গেট করেছে বিএনপি-জামায়াত। তারা রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে যাত্রীবাহী বাসে আগুন দিচ্ছে। তাদের দেওয়া আগুন থেকে যাত্রী, পরিবহন শ্রমিক কেউ রেহাই পায়নি। এখন যে ক্ষতিপূরণের তালিকা প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে পাঠানো হয়েছে, আশাকরি প্রধানমন্ত্রী পরিবহন মালিকদের সহায়তা করবেন।’
হরতাল-অবরোধে যানবাহন কম চলায় ক্ষতি
পরিবহন মালিক সমিতির নেতারা জানান, গত ২৮ অক্টোবর থেকে ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াতের হরতাল-অবরোধে ঢাকাসহ সারাদেশে যান চলাচল কিছুটা কম ছিল। ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির হিসাবে এই সময়ে ঢাকায় গড়ে ২০ শতাংশ গণপরিবহন বন্ধ ছিল। এতে ৪২২ কোটি টাকার ক্ষতি ধরা হয়েছে। আর একই সময়ে ঢাকার বাইরে ৬০ শতাংশ বাসে যাত্রী পরিবহন বন্ধ ছিল। এতে ক্ষতি ধরা হয়েছে ১০ হাজার ৪৪৪ কোটি টাকা। এছাড়া ঢাকা ও ঢাকার বাইরে গড়ে ৪০ শতাংশ ট্রাক-কাভার্ডভ্যান চলাচল বন্ধ থাকায় ৬ হাজার ২৫১ কোটি ২৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। সব মিলে ঢাকাসহ সারাদেশে আনুমানিক ক্ষতির পরিমাণ ১৭ হাজার ১১৭ কোটি ৪৫ লাখ টাকা।